CENTER DETAILS

ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসব সেবা শুরু সুপার মেডিকেল হাসপাতালে

সাভারে এই প্রথম ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসব চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু করেছে সুপার মেডিকেল হাসপাতাল। দেশে লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়া সিজারের সংখ্যা কমিয়ে আনতে এই ২০২০ এর শুরুতে প্রথমবারের মত ব্যথামুক্ত ডেলিভারি কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে ডেলিভারি করাতে আগত রোগির সাথের অভিভাবক বলেন, সন্তানকে গর্ভে ধারণের সময় অনেক দু:চিন্তায় সময় কাটাচ্ছেন তারা। নরমাল ডেলিভারি হবে কি-না। শেষ পর্যন্ত অপারেশন লাগবে কিনা। এমন অনেক চিন্তা চলে আসে হবু মায়েদের মনে। এমন শত চিন্তায় আশার আলো দেখিয়েছে সুপার মেডিকেল হাসপাতাল। গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক পর্যায় থেকে চিকিসা সেবা নিয়ে এখন ব্যাথামুক্ত নরমাল ডেলিভারী করার সকল আধুনিক সরঞ্জামাদির আয়োজন দেখতে পেয়ে রোগির পরিবারের সকলেই খুশি।

এ বিষয়ে সুপার মেডিকেল হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব সেলিম রেজা বলেন, “আগামী প্রজন্মকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন হিসেবে গড়তে অপারেশনের চেয়ে নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছে সুপার মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যেসব মায়েরা গর্ভবতীর প্রাথমিক পর্যায়ে সুপার মেডিকেল হাসপাতালের সেবা দিয়ে থাকে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগির নরমাল ডেলিভারী করা হয়ে থাকে।” তিনি আরো বলেন, “ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারির জন্য বাচ্চা গর্ভধারণের পর থেকে আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখা জরুরী। আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিয়মিত বিভিন্ন টেস্ট দিবেন এবং গর্ভের বাচ্চার অবস্থান লক্ষ্য করবেন। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি সম্ভব।”

এদিকে আধুনিক পরিবেশে ও স্বল্পমূল্যে একদল দক্ষ চিকিসক ও নার্সের সার্বক্ষনিত তত্বাবধানে সুপার মেডিকেল হাসপাতাল সব সময় গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারী হওয়ার ক্ষেত্রে জোর দিয়ে থাকে। ফলে চিকিসা সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট রোগীরা। টেকসই স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি সরকারের স্বাস্থ সেবায় উন্নয়নে কাজ করছে সুপার মেডিকেল হাসপাতাল। তাই হাসপাতাল কতৃপক্ষ গর্ভবতী মায়ের সিজার অপারেশনের পরিবর্তে নরমাল ডেলিভারিতে আগ্রহ বেশী। তবে এজন্য অভিভাবক ও মায়েদের কাউন্সিলিং প্রয়োজন।

সুপার মেডিকেল হাসপাতালে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারির কিছু সাফল্য চিত্র এখানে তুলে ধরা হলো। অপারেশন বিহীন ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে আমরা অগনিত মায়েদের মুখে হাসি ফুটিয়ে চলেছি প্রতিদিন। আপনিও আমাদের এই সেবা গ্রহন করে নির্মল মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহন করুন।
Painless Leaflet
Painless Leaflet 2

প্রশ্ন উত্তর

সম্প্রতি সুপার মেডিকেল হাসপাতালে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি শুরু হয়েছে। তাই অনেকেই এই পদ্ধতি সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত নন। অনেক রোগী জিজ্ঞাসা করে থাকেন - এটা আদৌ সম্ভব কিনা এবং কিভাবে? এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর এখানে দেয়া হলো।

উত্তর: এই প্রক্রিয়ায় নরমাল ডেলিভারির সময় যে সকল নার্ভ সমূহ ব্যথার অনুভূতি বহন করে সেগুলো ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে অবশ করে দেওয়া হয়, ফলে রোগী নরমাল ডেলিভারির পেইন অনুভব করতে পারে না। তবে এই সময়ে হাঁটাচলা বা অন্যান্য কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে পারবে। এই ব্যথানাশক প্রক্রিয়াটির নাম এপিডুরাল এনালজেসিয়া।

উত্তর: নরমাল ডেলিভারির তিনটি স্টেজ আছে, যেমন –
প্রথমে স্টেজ : লেবার পেইন শুরু হবার পর থেকে জরায়ুমুখ পুরোপুরি খোলা (১০ সেমি) পর্যন্ত সময়কে প্রথম পর্যায় ধরা হয়।
দ্বিতীয় স্টেজ : জরায়ু মুখ পুরোপুরি খোলার পর থেকে বাচ্চা ডেলিভারি পর্যন্ত।
তৃতীয় স্টেজ : এ সময় গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা ডেলিভারি হয়।

নরমাল ডেলিভারির প্রথম স্টেজে জরায়ুর মুখ যখন চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার খুলে যাবে এবং রোগী ব্যথা সহ্য করতে পারবে না তখন এই অবশ করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।

এ প্রক্রিয়ায় মেরুদন্ডের ভিতরে একটি প্লাস্টিকের ক্যাথেটার প্রবেশ করানো হয় এবং এখান থেকে কিছুক্ষণ পর পর স্পাইনাল কর্ডের এপিডুরাল স্পেসে ব্যথানাশক ওষুধ দেয়া হয়।

উত্তর: প্রথমত যেসব রোগীরা নরমাল ডেলিভারির ব্যথা সহ্য করতে চাইত না তারা এখন এভাবে সহজেই নরমাল ডেলিভারি করতে সক্ষম হবে। এতে নরমাল ডেলিভারির হার বেড়ে যাবে।

এতে সুবিধা হচ্ছে: সিজার-জনিত জটিলতা থেকে মা মুক্ত থাকবে; যেমন সিজারের জন্য কিছুটা হলেও মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়, সিজারিয়ান ডেলিভারিতে ব্লিডিং এবং ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা নরমাল ডেলিভারির তুলনায় বেশি থাকে। সিজারের আরো কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে এডহেশন তৈরি হওয়া অর্থাৎ পেটের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হয়, এছাড়াও একবার বা দু’বার সিজার হলে পরবর্তীতে আবার সিজার করার দরকার পরে। তাছাড়া, সিজারের পরে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সাধারণত দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে। অন্যদিকে, নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা হলে রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করতে পারে। অন্যদিকে বাচ্চা নরমাল প্রক্রিয়ায় হবার কারণে এদের শ্বাসকষ্ট এবং এলার্জি জনিত রোগে ভোগার সম্ভাবনা কম থাকে।

ডেলিভারির দ্বিতীয় স্টেজে মা যেহেতু জোরে পুশ করতে পারে না তাই সাধারণ নরমাল ডেলিভারির চেয়ে এখানে সময় বেশি লাগার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া এই প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল। তবে এই এনালজেসিয়ার কারণে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হবার কোন সম্ভাবনা থাকে না।

উত্তর: এপিডুরালের কারণে নরমাল ডেলিভারিহ বার চান্স কমে না, তবে যেকোনো নরমাল ডেলিভারির আগে থেকে ১০০ ভাগ সিওর হওয়া যাবে না যে শেষ পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা হবে কিনা। অনেক সময় দেখা যায় কোন স্টেজে এসে বাচ্চা আটকে গেলে কিংবা ফিটাল ডিসট্রেস/বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হলে সিজার করার দরকার হতে পারে।

উত্তর: যেসব মায়েদের নরমাল ডেলিভারির জন্য সিলেক্ট করা হয়, তাদের সবাই এপিডুরাল নিতে পারবেন। তবে তাদেরকে গর্ভকালীন সময়ে একবার এনেসথেসিস্ট ডাক্তারের মাধ্যমে চেকআপ করানো হয়।

উত্তর: প্রথমত, লেবার-কালীন সময়ে মা ও বাচ্চার মনিটরিং এর জন্য এক্সপার্ট ম্যান-পাওয়ার বা লোকবল থাকতে হবে। একজন অভিজ্ঞ এনেসথেসিস্ট এবং ইমারজেন্সি সিজার করার সুবিধা থাকা অবশ্য জরুরি। এছাড়াও মা ও বাচ্চার সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর জন্য সিটিজি মেশিন দরকার হয়।

গুরুত্বপূর্ন ঘোষনা – উপরে প্রদর্শিত মায়েদের স্থির চিত্র তাঁদের অনুমতি সাপেক্ষে সুপার মেডিকেল হাসপাতালের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে প্রদর্শন করা হলো। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, গরীব, অসহায়, দুস্থ, এতীম ও আর্থিক ভাবে অসচ্ছল রোগীর জন্য হাসপাতালের পক্ষ হইতে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ডাক্তার দেখানোর পূর্বে ডাক্তারের ভিজিট ফি নিজ দায়িত্বে জেনে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/রোগী/অভিভাবক কে অনুরোধ করা হইলো। ধন্যবাদ।

– আদেশক্রমে
হাসপাতাল কতৃপক্ষ